ছবিটি একটি বৈজ্ঞানিক কল্পনার মাঝে বাস্তবিক সমাধানে নিহীত মানবিক একটি গল্প, যেখানে মানব সভ্যতার বাঁচার চেষ্টা মহাজাগতিক বাস্তব পরিক্রমা। আমি গল্পটির মানবিক অংশগুলোকে বাদ দিয়ে শুধু মহাকাশযাত্রাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি স্ক্রিপ্ট ন্যারাটিভ অনুবাদের চেষ্টা করেছি।
**সূচনা : একবিংশ শতাব্দী, পৃথিবী জুরে আবাদযোগ্য ভূমির উর্বরতা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে, তার উপর আছে ফসলের রোগ আর ধুলি ঝড়ের আক্রমণ। খাদ্য সমস্যা এতটাই প্রকট যে প্রতিটি রাষ্ট্র সভ্যতার সকল বিবাদ অবসান করে অন্যান্য সকল প্রকার উন্নয়ন বাদ দিয়ে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যাস্ত।প্রাক্তন নাসা পাইলট জোসেফ কুপার বিপত্নীক - এক ছেলে টম ও এক মেয়ে মার্ফিকে নিয়ে শ্বশুরের সাথে বর্তমানে সাড়ে তিন একর জায়গা নিয়ে ভুট্টা চাষ করে। বাবার কাছে মার্ফির অনেক জানতে চাওয়ার আকাঙ্খা আর তার ঘরে ভুত বা অশরিরি কেউ আছে তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা, স্কুলে এপোলো ১১ এর চাঁদে মানুষের পদাপর্ণ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া আর ভুতের কার্যক্রম প্রোফাইলিং করা তার দৈন্যন্দিন কাজ। টম পড়াশোনায় মোটামোটি তবে শিক্ষকরা চান সে চাষাবাদ বিষয়ে লেখাপড়া করুক এবং সে ব্যাপারে টমেরও কোন আপত্তি নেই। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল কুপারের সাদাকালো জীবন। একদিন ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবার পথে কুপার একটি ভারতীয় ড্রোণকে মাটির খুব কাছ থেকে উড়ে যেতে দেখলো সঙ্গে সঙ্গে সে ড্রোণ টির পিছু নিলো এবং তা তার ল্যাপটপ ওয়াই ফাই দিয়ে ড্রোনটির কোন্ট্রল মোড হ্যাক করে ল্যান্ড করালো কারণ সে ড্রোণটির মাঝে একটি সোলার সেল ব্যাটারী আছে যা দিয়ে তাদের ফার্ম ঘরটি বছরের পর বছর পাওয়ার জেনারেট করতে পারবে। শেষ পর্যন্ত কুপার ড্রোণটি আয়ত্ব করতে পারলো এবং সে খুশিতে সে পরের দিন সবাই কে নিয়ে বেসবল খেলা দেখতে গেলো কিন্তু খেলার মাঝেই উঠলো ভয়ংকর ধুলিঝড় কোন মতে ঘরে ফিরে মার্ফির ঘরে খোলা জানালা বন্ধ করতে করতে কুপার আবিস্কার করলো মার্ফির ভুত বাইনারী কোডে ঘরের মেঝেতে একটি স্থানের অবস্থানচিন্হ ধুলো দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। স্বাভাবিক কৌতহলে কুপার ও লুকিয়ে থাকা মার্ফি সে জায়গার দিকে রওনা দিলো এবং রাতের আধাঁরে সেখানে পৌছল।
**নতুন নাসা :বাইনারী কোঅর্ডিনেট অনুযায়ী বিশাল এক স্থাপত্য এর সামনে এসে থামলো কুপার এর গাড়ি, গেটে আলো জ্বলে উঠলো, তাদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। কুপারের পূর্বপরিচিত প্রফেসর ব্রান্ড ও তার মেয়ের সাথে দেখা হবার পর কুপার জিজ্ঞাসা করলো এ প্রতিষ্ঠানটি কিসের, উত্তর আসলো এ হলো বন্ধ হয়ে যাওয়া নাসার নতুন রুপ তবে তা খুব গোপন ভাবে পরিচালিত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ছায়া সহযোগীতায়। প্রফেসর ব্রান্ডের প্রশ্ন তুমি কি করে এখানে আসলে? কুপারের প্রশ্ন নাসা এখানে কি করছে? কুপার এর উত্তর আর প্রফেসর ব্রান্ডের উত্তর খুব কাছিকাছি একটি যায়গাতে পৌছলো সেটা হলো কুপারকে কেউ বা কারা অজানা কোন ক্ষমতাবলে নতুন নাসার ঠিকানা দিয়েছে আর নতুন নাসার কাজ হচ্ছে ৪৮ বছর আগে আবিস্কৃত শনি গ্রহের কাছে একটি ওয়ার্মহোলের সৃষ্টি কেউ বা কারা করেছে মানুষকে নতুন ভাবে বাঁচার জন্য নতুন কোন গ্রহের সন্ধান দেবার জন্য। তারা কে বা কারা কেউ জানে না, এতোটুকু বোঝা যায় তাদের ক্ষমতা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বোধশক্তি ও মাত্রার বাইরে। প্রফেসর ব্রান্ডের কথা অনুযায়ী যে রোগ (Blight) শস্যর মাঝে দেখা দিয়েছে তা দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হবে কারণ পৃথিবীর বায়ু স্তরে ৮০% নাইট্রোজেন যা ধসা বা ব্লাইটকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে আর অক্সিজেন মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে, তাই মানুষের অবলুপ্তির সময় পৃথিবীতে খুব কাছে চলে এসেছে, হয়তো মার্ফির জেনারেশনের পর আর মানুষ এ পৃথিবীতে আর বাঁচতে পারবে না। তাই মহাবিশ্বের মাঝে মানুষের অস্তিত্ব বাঁচানো সময় চলে এসেছে। প্রফেসর ব্রান্ডের মিশন ল্যাজারাস (নামকরণটি যিশু মৃত ব্যাক্তি ল্যাজারাস কে জীবিত অবস্থায় পুনুরুত্থান করে ছিলেন তাই মৃত থেকে জীবিত হওয়াকে কেন্দ্র করে) শুরু হয়েছে ১০ বছর আগে হতেই ১২টি শিপ ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে ১২ পাইলট দ্বারা একটি গ্যালাক্সীতে পৌছে গেছে, যার মধ্যে একটি সৌরজগতে পৃথিবীর মতন তিনটি এম ক্লাস গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে, প্রফেসর ব্রান্ড কুপারকে তাদের শেষ সম্বল শেষ স্পেশ শিপটি পাইলট করতে অনুরোধ করেন, কুপার নিমরাজী থেকে রাজী হয় যাত্রার জন্য। মার্ফির অনেক অনুনয় আর বাধা স্বত্বেও কুপার একটি রাত তার ফার্ম হাউজে থেকে রওনা দেয় মিশন ল্যাজারাসের শেষ যাত্রাতে, রকেট এনডিউরেন্স পৃথিবী ছাড়ে অজানার উদ্দেশ্যে।
কিছু ট্যাকনিক্যাল বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চাচ্ছি, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই তাই আমার এ আলাপে হয়তো অনেক গ্যাপ থাকবে তারপরও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন এই আশাতে।
**ল্যাজারাস মিশন : ১০ বছর আগে ১২টি মহাকাশযান যাত্রা করে শণির কক্ষপথে ওয়ার্মহোলের মাঝে নতুন মানববসতি খোজার উদ্দেশ্যে, ১২ জন মহাকাশযাত্রীর হতে মাত্র তিন জনের কাছ থেকে মানববাসযোগ্য সোলার সিষ্টেমের খোজ পাওয়া গিয়েছে তবে তা একটি গার্গেনচুয়া নামের একটি ব্ল্যাকহোলের খুব কাছে। তিন জন অভিযাত্রী হচ্ছেন ডক্টর ম্যান, এডমন্ড এবং মিলার। ল্যাজারাসের শেষ মিশন সেই সৌরজগতে যাবে রকেট এনডিউরেন্স এর মাধ্যমে এবং দুটি পন্থা অবলম্বন করবে, ১. তিনটি গ্রহের যেকোনটি বাসযোগ্য হলে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সেখানে আরো মানুষ রওনা দিবে এবং নতুন পৃথিবী গড়বে। ২. যদি সময়ের হেরফের এ মানব সভ্যতা এরই মাঝে নিশ্চিন্হ হবার পথে থাকে তাহলে ৫০০০ হিমায়িত মানব এম্ব্রিও এনডিউরেন্স এ থাকবে যা জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে নতুন মানব সভ্যতার সৃষ্টি করবে।
**মহাকাশযান এনডিউরেন্স : স্বাভাবিক রকেট প্রপালশন সিষ্টেমের মহাকাশযান পৃথিবী থেকে মধ্যেকর্ষ দুটি এক্সিলেরেশন ইঞ্জিন ডাম্প করে আয়ন স্ফিয়ারের উপরে উঠে স্কাউটশিপ রেঞ্জার জেট প্রপালশন ব্যবহার করে মহাকাশের মাঝে অবস্থিত গ্রাভিটি প্রপালশন ব্যাসড একটি ঘুর্নায়মান 12টি পড স্বম্বলিত একটি ইউনিটের সাথে যুক্ত হয়ে পুরো মহাকাশযান এনডিউরেন্স এ রুপান্তরিত হয় (সেখানে অবশ্য আরো একটি শাটল যান র্যাঞ্জার ২ ও অবস্থান করছে), যা ঘুনর্ন শুরু করে মঙ্গলের মধ্যেকর্ষণ কে কাজে লাগিয়ে মঙ্গল ঘুরে শণি গ্রহের কক্ষপথের (টেকনিক্যালি স্লিংশট বলা হয়) দিকে রওনা দিবে মহাকাশ যানটি। অভিযাত্রী ৪ জন-- ১. জোশেফ কুপার, ২. ড: ডয়েল, ৩. ড: রোমিলি এবং ড: এমিলিয়া ব্রান্ড এবং দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন ভার্টিকাল ব্লক শেপড রোবট TARS এবং CASE। শণিগ্রহের কক্ষপথে পৌছানোর সময় ৭০০ দিন।
**ওয়ার্মহোল, ব্ল্যাকহোল এবং স্থান কাল ও অন্যান্য কিছু আপেক্ষিক তত্ত্ব : ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সিটিটিউট অফ টেকনোলোজির কৃতি এষ্ট্রোফিজিসিষ্ট ’কিপ থোর্ণ’ ইন্টারষ্টেলার মুভির মূল বৈজ্ঞানিক তথ্যর চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করেছেন তার টাইম স্পেস ওয়ার্প ও গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ থিউরি -আইনষ্টাইনের রিলিটিভিটি সূত্রের সাহায্য নিয়ে করা- মুভিটির প্রতিটি বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটের সৃষ্টি আংকিক সূত্রে বাস্তবতার কাছাকছি নিয়ে গিয়েছে। ইন্টারষ্টেলার যে কোন ফিকশন মুভি নয় মহাকাশের প্রতিটি পদক্ষেপ ছবিটিতে বিজ্ঞানের আংকিক সূত্রের সাথে যুক্ত, হয়তো সেটা পরিক্ষীত নয় তবু বাস্তবতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিটিতে যার ফলাফল নাসা দ্বারাও স্বীকৃত।
**স্পেস টাইম প্যারাডক্স : আইনষ্টাইনের রিলিটিভিটি ল তে স্পেস ও টাইমকে একে অপরের পরিপূরক বলে আখ্যায়িত হয়েছে, তার মতে স্পেস ও টাইম সবসময় এক থাকবে এ ধারণা সঠিক নয় স্থান ও কাল যেন একটি কার্ভড কাপড়ের উপর ঘুর্নায়মান অবস্থায় প্রদক্ষিন করছে, যে বস্তুর ভর এর উপর সময় ও কাল পার হচ্ছে তার ভরের তারতম্যর জন্য সময় ও কালের তারতম্য ঘটে যেমন ধরুন : আপনি একটি সৌরজগতের একটি গ্রহে বাস করছেন যেখানে সাধারণ একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ সান এর চার পাশ দিয়ে আপনার গ্রহটি প্রদক্ষিন করছে সে গ্রহের স্থান ও কাল অন্য একটি সৌরজগতের একটি গ্রহ যার পাশেই একটি সর্বগ্রাসী ব্ল্যাক হোল এর অবস্থান তার স্থান ও কাল অবশ্যই ভিন্ন হবে তার মূল কারণ ব্ল্যাকহোলটির ভর ও মহাকর্ষর টান হোয়াইট ডোয়ার্ফ নক্ষত্রের থেকে অনেক বেশী। ত্বরণ বা গতিও সময় ও স্থান কে পরিবর্তিত করে উদাহরন : ধরেন আপনি আপনার এক বন্ধুকে পার্কের একটি বেদিতে বসিয়ে লাইট স্পিডে পুরো এমিরিকা ঘুরে এলেন আপনার কাছে সময় যাবে কয়েক সেকেন্ড কিন্তু আপনার বন্ধুর হাতের ঘড়িতে সময় পার হবে বেশ কিছু দিনের।
**ওয়ার্মহোল : ওয়ার্মহোল মহাজাগতিক বিচিত্রতার একটি রুপ, বিজ্ঞান সূত্রে বিশাল পরিমান নেগেটিভ ম্যাস বা এনার্জি একত্রিত হলে একটি ওয়ার্মহোলের সৃষ্টি হয়, এ ওয়ার্ম হোলের মাধ্যমে আলোর গতির চেয়ে বেশি দ্রুত এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সি ভ্রমণ করা যায়। আইনষ্টাইনও ওয়ার্মহোলের কথা স্বীকার করে গেছেন, তবে যে পরিমান নেগেটিভ এনার্জি একটি ওয়ার্ম হোল উম্মক্ত হতে প্রয়োজন তা আমাদের গ্যালাক্সিতে এখনো দেখা যায়নি, সবই এখনো অর্ধ সত্যের চর্চা এষ্ট্রোফিজিক্সে।
**ব্ল্যাকহোল : কৃষ্ণ গোহব্বর বা ব্ল্যাক হোলের তত্ত্বও আইনষ্টাইন এর সৃষ্টি, আজকের বিজ্ঞান ব্ল্যাকহোলের সন্ধান পেয়েছে, প্রতিটি গ্যালাক্সি কোন না কোন ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ আকর্ষণে প্রদক্ষিত হচ্ছে আমাদের মিল্কি ওয়েও তাই। ব্ল্যাক হোলের উৎপত্তি নিয়ে আমার সঠিক জানা নেই তবে কখনো কোন নক্ষত্র সুপার নোভা অবস্থানে পৌছে বিস্ফোরিত হলে ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টি হতে পারে। ব্ল্যাক হোল তার কালো গর্তের ভিতর আশে পাশের সব কিছু টেনে আনতে থাকে এবং তার মহাকর্ষ বল আশেপাশের সব গ্রহ, নক্ষত্র কে তার চর্তুদিকে প্রদক্ষিত করতে বাধ্য করে। ব্ল্যাক হোলের আওটার রিম কে বলে ইভেন্ট হোরাইজন সেখানে মহাকর্ষের বল প্রচন্ড সেখান থেকে কোন কিছুই মুক্তি পায় না ঢুকে যায় অজানা কোন ঠিকানায়।
**সিংগুলারিটি : কোন ওয়ার্মহোল এর সিংগুলারিটি তাকেই বলে যেখানে তার ভর অনুযায়ী মহাকর্ষ বল তীব্র থাকে, ব্ল্যাক হোলে ক্ষেত্রে তার আওটার রিম বা একদম বাহিরের বলয় যেখানে ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন শুরু হয় তাই তার সিংগুলারিটি। এ সিংগুলারিটিতে মহাকর্ষ যেকোন বস্তু ছোট বা বিশাল হোকনা কেন তার কালো গহ্বরে আকর্ষিত করে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়।
**৫ম মাত্রার স্বত্বা : আমরা মানুষরা ও পৃথিবীর সবকিছু ৩য় মাত্রার মাঝে সীমাবদ্ধ, আমাদের ছায়া যেমন ২য় মাত্রার মাঝে আটকে থাকে তেমনি। ইন্টারষ্টেলার ছবিটিতে ৫ মাত্রার স্বত্ত্বার কথা বলা হয়েছে, যারা কুপারকে নতুন নাসার রাস্তা চিনিয়েছে, যারা একটি নেগেটিভ এনার্জির ওয়ার্মহোল শণিগ্রহের কক্ষপথে স্থাপন করেছে এমনকি ছবির শেষে সৃষ্টি করেছে একটি কিউবিকল টেসারেক্ট যেখানে ৪র্থ মাত্রার স্থানকে ৩য় মাত্রায় রুপ দিয়ে কুপারকে মার্ফির সাথে কখনো বাইনারী কখনো মোর্স কোডে যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করেছে। কারা এই ৫ম মাত্রার স্বত্বা, ছবির কাহিনীতে এই স্বত্ত্বা নিয়ে বেশী কিছু বর্ণনা করা হয়নি, এমিলিয়ার কথায় তারা সময়কে গ্র্যাভিটির মাধ্যমে ব্যবহার করতে জানে তাই তারা হয়তো অতীতে বা ভবিৎষ্যতে যাতায়াত করতে পারে আমরা মানুষেরা যেমন পাহাড়ে উঠানামা করতে পারি তেমনি। শেষে কুপার ধারণা করে আমরা মানবজাতি কোন এক সময় আমাদের বর্তমান কায়া পরিবর্তন করে ৫ম মাত্রার স্বত্ত্বাতে পরিণত হবে, এবং সময়ের দাবীতে সাহায্যের জন্য মানব জাতিকে বাঁচিয়ে রাখার পদক্ষেপ নেবার এই প্রচেষ্টা তাদের। কে জানে হতেও পারে? - গল্পে ফিরে যাই :
**মিলারের গ্রহ : শনির কক্ষপথে পৌছে ক্রায়জেনিক স্লিপ থেকে উঠে ৪ জন যাত্রী ওয়ার্মহোলের মাঝে দিয়ে যাত্রা শুরু করলো, ওয়ার্মহোলটি একটি গর্ত মনে করলে ও তা বাস্তব দৃষ্টিতে একটি আলোকিত গ্রহের অবয়ব ধারন করে ৩য় মাত্রাতে তার মাঝে এনডিউরেন্স প্রবেশ করা মাত্র একটি গাড়ি যেমন আলোকিত কোন টানেলের ভেতর দিয়ে যেমন যাতায়াত করে তেমনি একটি আবহ নিয়ে ওয়ার্মহোল মহাকাশ যানটিকে তাদের নির্দিষ্ট সৌরজগতে এনে পৌছালো, এখন প্রশ্ন উঠলো কোন গ্রহে আগে যাওয়া যায়। তথ্য মতে মিলারের গ্রহে পানি আছে, যা জীবন ধারণের জন্য প্রথম শর্ত, অন্য দিকে ড: ম্যান এর গ্রহের ভালো কিছু সম্ভাবনার তথ্য এনডিউরেন্স এর ডাটাবেস এ আছে, তবে গত তিন বছর ধরে এডমন্ডের কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মিলারের গ্রহ মহাকাশযানটির কাছে কিন্তু সমস্যা একটি মিলার ও ম্যান এর গ্রহের কাছেই অবস্থান করছে একটি ব্ল্যাক হোল নামকরন করা হয়েছে গার্গেনচুয়া যার তীব্র মহাকর্ষের আকর্ষণের কারণে গ্রহদুটিতে অবতরন করলে পৃথিবী ও মহাকাশযানের সময়ের তারতম্য ঘটবে বিশাল পরিমাণ যেমন মিলার গ্রহে অবতরনের পর প্রতিটি ঘন্টা অতিবাহন পৃথিবীর ৭ বছরের সমান হবে। সিদ্ধান্ত হলো কুপার, ব্রান্ড, ডয়েল রোবট কেস কে নিয়ে গ্রহটিতে অবতরণ করবে এবং যতো দ্রুত সম্ভব তথ্য উপাত্ত নিয়ে মহাকাশযানটির ঘুর্নায়মান পডে ফিরে আসবে, ড: রোমিলি পডে থাকবে এবং যতোটুকু সময় ক্ষেপন হবে তা নিয়ে তিনি গার্গেনচুয়ার মহাকর্ষবলের তথ্য যোগার করবেন। মিলারের গ্রহে পৌছে সবাই দেখল সে এক বিশাল সাগর, মিলারের যানের বিকন এর কাছাকাছি ল্যান্ড করলো বহন করে আনা যান রেঞ্জার, কিন্তু কোথায় মিলারের মহাকাশযান, অল্প সময়ই মিললো সে যানের ভগ্নাবশেষ, শুধু বিকনটি কাজ করছে আর কিছু নেই, মহাকর্ষ শক্তির সময়ের আলো ছায়াতে বোঝা গেল মিলারের শিপটি কিছু ঘন্টা আগেই গ্রহটিতে পৌছে ছিল কিন্তু এখন তা ভেঙ্গে চুরে বিলিন হয়ে গেছে, সাগরের দৃষ্টির সীমানায় বিশাল পাহাড়ের ছায়া ব্রান্ড মিলারের শিপটির রেকর্ডার খুজতে যেয়ে আটকা পড়ে গেলো যান্ত্রিক ধংসাবশেষএর মাঝে তখনি বোঝা গেলো দুরে যা দেখা যাচ্ছে তা পাহাড় নয় 4000 ফিট উচু টাইডাল ওয়েভ ধেয়ে আসছে রেঞ্জার এর কাছে, রোবট কেস ব্রান্ডকে উদ্ধার করলো রেঞ্জারে উঠালো কিন্তু ডয়েল সেকেন্ডের বিরতিতে সেই ঢেউতে বিলিন হয়ে গেলো। রেঞ্জার এর ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়াতে কিছু সময় অপেক্ষা করে দ্বিতীয় পাহাড়সম ঢেউ আসার আগেই রেঞ্জার মূল এনডিউরেন্সএর পডে পৌছালো, এতটুকু সময়ে পার হয়ে গেছে প্রায় ২৪ বছর। গভির নিদ্রাকে বেছে না নিয়ে বয়স্ক এক রোমিলির সব আশা ছেড়ে অপেক্ষায় ছিলো এই দীর্ঘ সময় কবে ফিরে আসবে কুপাররা।
প্রফেসর ব্রান্ডের সৃষ্টির মাঝে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য: মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসি আমরা, রোমিলির সাথে সাথে মার্ফিরও ২৪ বছর কেটে গেছে তার বাবার অপেক্ষায়, সে একজন এষ্ট্রোফিজিশিষ্ট প্রফেসর ব্রান্ডের সাথে নাসার একজন প্রথম শ্রেনীর রিসার্চার। একদিন প্রফেসর ব্রান্ডের মহাকাশ গবেষনার লম্বা ইকুয়েশনে একটি ভুল প্রথম থেকে আছে বলে উপলব্ধি করলো সে, প্রফেসরকে জিজ্ঞাসা করলো কেন আপনি একটি মৌলিক যুক্তিকে লুকিয়ে ইকুয়েশনটি সাজিয়েছেন, প্রফেসর সেদিন উত্তর দিলেন না, কিন্তু কিছুদিন পর মৃত্যুসয্যায় তিনি মার্ফির কাছে স্বীকার করলেন যে তার প্ল্যান এ বলে কিছু ছিলো না, পৃথিবীর মানুষদের বাঁচার আর পথ নেই আর সময়ও নেই, তিনি গার্গেনচুয়ার সিংগুলারিটির হিসাবটা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন এবং জানতেন যে ব্ল্যাক হোল এর ইভেন্ট হরাইজনের মাঝে তথ্য পাওয়া যাবে তা দিয়েই শুধু এ অংক মেলানো যাবে কিন্তু সেটা সম্ভব না ব্ল্যাকে হোলের সিংগুলারিটি কখনোই কোন তথ্যকে পৃথিবী পর্যন্ত পৌছাতে পারবে না এবং এ জীবনে কুপারও আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে না। তাই শেষ চেষ্টা প্ল্যান বি কে তিনি এক্সিকিউট করার জন্যই এনডিউরেন্স এর এই সফর কে বাস্তব করার চেষ্টা করেন। মার্ফি আবার ইকুয়েশনটি নতুন করে সাজাতে শুরু করলো কিন্তু কিছু তথ্যর অভাবে কোন ভাবে মিলানো যাচ্ছেছিলোনা অংকটা। একদিন সেই তার অশরিরীর কোন সংকেতের জন্য ফিরে গেলো তার ফেলে আসা রুমে যদি কোন তথ্য মিলে সে আশায়।
মহাকাশে ফিরে আসা :
**ডঃ ম্যানের গ্রহ : ৩৪ (পৃথিবীর সময় অনুযায়ী)বছর আগে শুরু হওয়া ল্যাজারাস প্রজেক্টের পুরোধা ছিলেন ড: ম্যান, ওয়ার্মহোলে অবস্থান, ১২টি মহাকাশযান গুলো ট্রেজেক্টরি কি হবে, কারা হবেন সে ১২ জন যাত্রী, তাদের মোটিভেশন সবই ড: ম্যানের হাতেই সম্পাদিত হয়েছিল তাই তিনি ব্রান্ড পিতা ও কন্যার নিকট একজন বিশেষ ব্যাক্তি রুপেই মনে বিরাজ করছিলেন। যখন এনডিউরেন্সে প্রশ্ন তোলা হলো মিলারের গ্রহ হতে কোথায় পরবর্তীতে যাওয়া যায় এমিলিয়া তার মত প্রকাশে এডমন্ডের গ্রহের কথা বলেন কিন্তু নানা বিচার বিশ্লেষন এবং এমিলিয়ার সাথে এডমন্ডের বিশেষ সর্ম্পক থাকায় ও দুরত্বের গননায় কুপার বেছে নেয় ড: ম্যানের প্লানেটের অনুসন্ধান করবার জন্য এবার সবাই মিলে রওনা দেয় ড: ম্যানের প্লানেটের উদ্দ্যেশ্য।
ড: ম্যানের গ্রহ একটি বরফ আচ্ছন্ন পাহাড়ি ভূমি সমতুল্য, পুরো গ্রহটি বরফের এমনকি আকাশে যে মেঘ তাও বরফ। বাতাসে এমোনিয়ার মাত্রার কারণে নিশ্বাস নেওয়া কঠিন। স্কাউটশিপ রেঞ্জার ড: ম্যানের বিকন অনুযায়ী তার শিপের নিকট অবতরণ করলো, ড: ম্যান শিতল নিদ্রাতে আচ্ছাদিত ছিলেন, ২০ বছর কেটে গেছে এ গ্রহে তার পদাপর্ণের (কারন মিলারের গ্রহ হতে ম্যানের গ্রহ বেশ দুরে তাই মিলার এর পরিনতি তার অবতরণের ২ ঘন্টার মাঝে হলেও গার্গেনচুয়ার মহাকর্ষ ড: ম্যানের গ্রহে আপেক্ষিক কম থাকায় সময়ের এ তারতম্য ঘটেছে)। তাকে জাগানো পর তিনি বললেন এ গ্রহ আমাদের মানে মানুষের গ্রহ হতে পারে যদিও মানুষ বসবাসের অযোগ্য অবস্থায় আছে কিন্তু তিনি তার লম্বা সময় গ্রহে অবস্থানে বরফের নিচে মাটি পেয়েছেন যা চাষাবাদ যোগ্য এবং সেটা অনাবৃত হলে এমোনিয়াও অপসারিত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এনডিউরেন্সের যাত্রীদের মাঝে টার্স এর মনে প্রশ্ন জাগলো ড: ম্যানের সাথে যে রোবটটি ছিলো নাম KIPP তা খুলে রাখা হয়েছে কেন? ড: ম্যান বললেন সে মালফাংশনের শিকার, ভুল তথ্য দিচ্ছিলো তাই আন এসেম্বল করে রাখা হয়েছে।
এসময়ই রোবট কেস এর নিকট মার্ফির রেকর্ডেড একটি ম্যাসেজ আসলো আমিলিয়ার উদ্দেশ্যে যে তার পিতা প্রফেসর ব্রান্ড মারা গেছেন শান্তিতে, মেসেজটি শেষ করতে গিয়ে মার্ফি এমিলিয়ার কাছে প্রশ্ন করলো সে তার পিতার এ ইচ্ছাকৃত ভুল তত্বের কথা জানতো কিনা? তার বাবাও কি জানতো সে আর ফিরে আসবে না পৃথিবীতে। শোকাচ্ছন্ন এমিলিয়া কুপারকে শুধু বলতে পারলো তার পিতা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ অংক মিলাতে চাইছিলেন কিন্তু তার পরিনতি এ হবে সে তা জানতো না, উত্তর দিলেন ড: ম্যান, তিনি বললেন এ অংক তার পৃথিবী ছাড়ার আগেই প্রফেসর ব্রান্ড মিলিয়ে ফেলেছিলেন তার অংকের ফলাফল প্লান এ এর পক্ষে কোন ভাবে যায়না কারণ সে অংকে মহাকর্ষ, ত্বরণ ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনেক তথ্যই অজানা ছিলো, তাই তিনি সবাই কে একটি আশা দেখিয়ে এ পথে হাটার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। হতাশায় বিধ্বস্ত কুপার, রোমিলির কাছে তার অভিমত জানতে চাইলো রোমিলি বললো সে তথ্য পাবার একমাত্র উপায় ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হোরাইজনের ওপার থেকে, এবং সেটা কোনভাবেই সম্ভব না, কারণ ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হোরাইজন থেকে কেউ বা কোন কমিউনিকেশন ফিরে আসার কোন উপায় নেই। পরবর্তীতে রোমেলি কুপার কে বললো একটা উপায় হয়তো আছে, যেহেতু গার্গেচুয়া বেশ পুরোনো একটি ব্ল্যাক হোল তার হরাইজন সিংগুলারিটি খুবই শান্ত তাই একটি প্রোব যদি গার্গেনচুয়ার হরাইজন পর্যন্ত পৌছাতে পারে এবং সিংগুলারিটির আকর্ষনে হারিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সকল বাইনারী বা পাল্স কোডে কোয়ান্টাম তথ্য সম্প্রচার করতে পারে হয়তো সেখান থেকে প্রফেসর ব্রান্ডের মহাকর্ষের অংকটি মিলতে পারে, বেঁচে যেতে পারে পৃথিবীতে থাকা মানুষেরা।
ড: ম্যানের গ্রহের সারফেস বা মাটির কথাকে ভিত্তি করে কুপার গ্রহের গবেষনার জন্য তিনটি গবেষনাগার স্থাপন করতে চাইলো এবং সে জন্য ড: ম্যানের সাথে তার বেস থেকে বেশ কিছু কিলোমিটার দুরে যেখানে ড: ম্যান বরফের নিচে মাটি পেয়েছেন তার দিকে রওনা দিলো। কিন্তু ড: ম্যান -কুপারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করলো কারণ সে বুঝতে পেরেছিলো কুপার বুঝে যাবে তিনি মিথ্যা বলেছেন আসলে এ গ্রহে প্রাণ সঞ্চারের কোন সম্ভবনাই নেই। এ গ্রহে আসার পর থেকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করবার পর তার আশাহত হৃদয় চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিকন চালু রেখে চাইছিলেন কেউ কখনো এখানে আসুক তারপর তাদের চোখ ফাকিঁ দিয়ে তিনি নিজে অভিযাত্রীদের শ্পেসশিপ নিয়ে পৃথিবীর মানুষের ভ্রুণ নিয়ে একটি বসবাসযোগ্য গ্রহ খুজে মানবজাতির উত্তরণ ঘটাবেন। হবেন মানুষের কাছে তাদের শেষ রক্ষাকর্তা (বড় বিচিত্র মানুষের মন)। এমিলিয়া আর কেস এর দ্রুত হস্তক্ষেপে কুপার সে যাত্রা বেঁচে যায়, কিন্তু রোমিলি কিপ কে চালু করতে যেয়ে ম্যান এর সেট করা বিস্ফোরনে জীবন দেন। এতসব ঘটনার মাঝে ম্যান তার স্কাউটশিপ নিয়ে এনডিউরেন্স এর ঘুর্নায়মান পডগুলি দিকে রওনা দেয় পিছনে ধাওয়া করে কুপার, এমিলিয়া, টার্স আর কেস। অনেক বার মানা করা স্বত্বেও ড: ম্যানের জোর করে এনডিউরেন্স এ ডকিং বে তে যোগসূত্র স্থাপন করতে যেয়ে ড: ম্যান এর স্কাউটশিপটি বিস্ফরিত হয় কেননা টার্স ডকিং সিকোয়েন্স কী-টি বদলিয়ে রেখেছিলো। সে বিস্ফোরণে এনডিউরেন্স এর পডটি তার কক্ষের বীপরিতে এলোমেলো ভাবে ঘুরতে থাকে, কুপার অনেক চেষ্টা করে রোবট টার্স ও কেস এর সাহায্যে বিধ্বস্ত এনডিউরেন্স এর সাথে ডক করে, কিন্তু এনডিউরেন্স সর্ব শক্তি হারিয়ে ড: ম্যানসের গ্রহের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। এনডিউরেন্স এর সাথে ডকিং এর পর মেইন ইঞ্জিন ফুল থ্রাষ্টে দিয়ে অরবিট থেকে মহাশূন্য পৌছল মহাকাশযানটি কিন্তু গার্গেনচুয়ার আর্কষন উপেক্ষা করতে না পেরে ব্ল্যাকহোলটির দিকে ধাবিত হলো বিধ্বস্ত এনডিউরেন্স।
**ব্লাক হোল গার্গেনচুয়া : এমিলিয়া ও কুপার বহু কষ্টে এনডিউরেন্স এর ব্যাক আপ পাওয়ার চালু করে জানতে পারলো যে নেভিগেশন পডটি সর্ম্পূণ ধ্বংস হয়ে গেছে তাই পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব না তবে কুপার বুদ্ধি করে গার্গেনচুয়ার মহাকর্ষকে ঠিক মঙ্গলের (গ্রহ) মতো সিংশট সিষ্টেমে ব্যবহার করে শেষ গ্রহ এডমন্ডের গ্রহের যাবার একটি প্ল্যান তৈরী করলো, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা কুপারকে কোন প্রকার নেভিগেশন ছাড়া নিজ হাতে করতে হবে। সিদ্ধান্ত হলো গার্গেনচুয়ার কাছাকাছি পৌছে ড: ম্যানের শাটেল শিপ ল্যান্ডার এবং পরবর্তীতে শাটল শিপ রেঞ্জার এবং রেঞ্জার ২ এর রকেট ফুয়েলকে কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গতি বাড়িয়ে গার্গেনচুয়ার চুম্বকশক্তিকে হার মানানো হবে এবং এনডিউরেন্স রওনা দিবে এডমান্ডের গ্রহের দিকে, এর মাঝে ল্যান্ডার এর মাঝে রোবট টার্স পুরো ফুয়েল শেষ করে গার্গেনচুয়ার ইভেন্ট হরাইজনে পতিত হবে (মূলত যদি কোন কোয়ান্টাম তথ্য এর মাঝে সে দিতে পারে ব্ল্যাকহোলটি সম্বন্ধে)। তিনটি শাটল শিপে তিন জন অবস্থান নিলো ল্যান্ডারে টার্স, রেঞ্জার ১ এ এমিলিয়া ব্রান্ড ও কেস এবং রেঞ্জার ২ তে কুপার। প্রথমে ল্যান্ডার এর ফুয়েল শেষ হলো টার্স হারিয়ে গেলো ব্ল্যাকহোলে, এবার কুপার এমিলিয়াকে চমকে দিয়ে নিজেও রেঞ্জার ২ নিয়ে ডিটাচড হলো কারণ কুপার জানতো দুটি শাটল শিপের ওজন নিয়ে এনডিউরেন্স কখনোই গার্গেনচুয়ার মহাকর্ষকে কাটাতে পারবে না আর রেঞ্জার ১ ও কোনদিন এডমান্ডের গ্রহে পৌছতে পারবে না। ডিটাচের পর কুপার পতনশীল হতে থাকলো অজানা এক অন্ধকারের দিকে সামনে আলোর দিকে ভেজা চোখ নিয়ে এমিলিয়াও ছুটে চললো সে একই কালো মহাশূন্যর বুকে।
**টেসারেক্ট : ঘন কালো অন্ধকার, তার মাঝে পতন ঘটছে রেঞ্জার ২ এর, ল্যান্ডার থেকে কোন সারা নেই। হঠাৎ গতি বাড়তে থাকলো রেঞ্জার ২ এর পতনের, হালকা বালুকণার মতো আলো এসে ছিটকে পরলো শাটলশিপটার উপর, তারপর আরো গতি, আরো আলোর বিচ্ছুরণ, এতটাই গতি যে শাটলশিপটির বাহিরের অবয়বে ফুটো হয়ে যেতে থাকলো, তার মাঝে কুপার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জ্ঞান পাবার পর সে দেখলো দুরে রেঞ্জার ২ হারিয়ে যাচ্ছে আর সে পতিত হচ্ছে নিচে একটি গোলাকার আকৃতির অবয়বে, পতনের গতিতে সে দেখলো গোলাকার হতে অবয়বটি পরিণত হয়েছে চার কোণা সেটাই হচ্ছে টেসারেক্ট (আপনারা নিশ্চয়ই জানেন টেসারেক্ট হচ্ছে একটি বাক্সের বা কিউবের ৪র্থ মাত্রার অবস্থান যার ৩য় মাত্রাতে আমরা ৬টি কোন খুজে পাই আর ৪র্থ মাত্রায় তা ৮টি কোনের সৃষ্টি করে বিস্তারিত আমার তেমন জানা নেই সে জন্য ক্ষমা চাচ্ছি(আমার তথ্য ভুলও হতে পারে) যার ভেতরটা তার বাড়ির মার্ফির রুমের অবয়বের মতোই লাগলো সে অবয়বে হাত দিয়ে সে তার পতন বন্ধ করল। ধীরে ধীরে কুপার বুঝতে পারলো সে যে যায়গাতে ধরে আছে তার পৃথিবীতে তার বাড়িতে মার্ফির ঘরের বইয়ের শেল্ফটির পিছন দিক,আসলে পুরো টেসারেক্টটি ছিলো মার্ফির ঘরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রতিফলন। শেল্ফটির পিছন থেকে কুপার মার্ফিকে দেখতে পেলো এবং সে সর্বশক্তিতে আঘাত করে যেতে থাকলো শেল্ফটির পেছনের অংশে কিন্তু তাতে তেমন কোন লাভ হলো না, কুপার মোর্স কোড সংকেতে জোরে ধাক্কাদিয়ে কিছু বই মাটিতে ফেললো মার্ফিকে জানানোর জন্য যেন তাকে মার্ফি মহাকাশ অভিযানে না যেতে দেয় তাও কাজে দিলো না। এমন সময় কুপার রোবট টার্স এর কথা শুনতে পেলো, টার্স বললো সে কোথায় আছে সে জানে না, তবে এটুকু সঠিক যে সে ৫ম মাত্রার মাঝে বিচরণ করছে, তার কাছে ব্ল্যাক হোলের গ্রাভিটিশন্যাল কোয়ান্টাম তথ্য সব আছে যা সে কুপার এর কাছে প্রেরণ করলো মোর্স কোডে কুপার তা মার্ফিকে দেয়া শেষ উপহার ঘড়িটির সেকেন্ড এর কাটার উঠানামার মাঝে আংকিক সূত্র গুলো প্রেরণ করলো বই শেল্ফের ওপার থেকে। সে মূহুর্তে বড় হয়ে যাওয়া মার্ফি কোন এক খেয়ালে বুঝতে পারলো তার বইয়ের শেল্ফএর পেছনে থাকা অশরিরি আর কেউ না তার বাবা, এবং শেষ বেলায় ঘড়ির কাটার উঠানামা দেখে সে নিশ্চিত হলো তার বাবাই তাকে সে সংকেত পাঠাচ্ছে যা সে শিখে ছিলো তার বাবার কাছে। ধীরে ধীরে সে তার ঘড়ির কাটার তারতম্য অংকের সংখ্যায় রুপান্তরিত করে গ্রাভিটিশন্যাল অংকটি মেলাতে পারলো। ওদিকে কুপার টার্স কে প্রশ্ন করলো কাজ কি হয়েছে? টার্স বললো মনে হচ্ছে হয়েছে, কারণ টেসারেক্টটি ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে বড় কিছু শক্তি, কুপার বললো টার্স ওরা আর কেউ না ওরা মানুষ, টার্স বললো মানুষের এতো ক্ষমতা কোন ক্রমেই হতে পারে না। কুপার বললো আজ হয়তো না, কিন্তু কোন এক সময় মানুষ তার অবয়ব ছেড়ে, মাত্রা অতিক্রম করে এ অবস্থায় রুপ নিতে পারে, তাই তারা আমাদের সাহায্য করছে অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য। আবারো প্রচন্ড আলোর মাঝে কুপার হারিয়ে গেলো। পৃথিবী ছেড়ে যাবার ৯০ বছর পর মূমুর্ষ অবস্থায় কুপার কে খুজে পেলো মানুষের একটি রেসকিউ যান শণির বলয়ের কাছাকাছি।
**কুপার’স ষ্টেশন : জোশেফ কুপারের যখন জ্ঞান ফিরলো সে তখন মেডিক্যাল বেডে, পৃথিবীর বয়সে তার বয়স ১২৪ কিন্তু ফিজিক্যালি মাত্র ৩৬, সে জানতে পারলো সে বর্তমানে শনি গ্রহের পাশে আবর্তন করা একটি ষ্পেস ষ্টেশনে আছে যার নাম কুপার’স ষ্টেশন। মনের খুশিতে সে বললো আমার নামে ষ্পেস ষ্টেশন ও আছে, ডাক্তার সমূহ হাসি মুখে বললেন সরি, ষ্টেশনটি আপনার মেয়ে মার্ফি কুপার এর নামে নাম করণ হয়েছে, কারণ উনার কারণে মহাকর্ষের বলের বিপরিতে অবস্থান তৈরী করা যায় সে থিউরি এসেছে (এটা ডাক্তাররা বলেন নাই আমি যোগ করলাম)। এবং উনাকে আপনার কথা বলা হয়েছে. বার্ধ্যক্য জনিত কারণে দেরী হলেও কিছু সপ্তাহের মধ্যেই তিনি এখানে আসবেন আপনার সাথে দেখা করার জন্য। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সে ষ্টেশনে তার জন্য ঠিক করা বাসস্থানে গেলো, কর্তৃপক্ষ পৃথিবীতে যে ভাবে তার বাসাটি ছিলো ঠিক সেভাবেই বাসভবনটি প্রস্তুত করে রেখেছে তার জন্য । সেখানে কুপার শক্তি বিহীন টার্সকে পেলো জানতে পারলো তার পাশাপাশি টার্সকেও রেসকিউ টিম খুজে পেয়েছিলো। পরে অনুরোধ করে নতুন ব্যাটারী সংযোজন করে টার্সকে আবার নতুন সেটিংস এ এক্টিভেট করলো কুপার। ধীরে ধীরে মার্ফির সাথে দেখা করার সময় চলে আসলো। এর মাঝেই কুপার দেখতে পেলো সে ষ্পেস ষ্টেশনে রেঞ্জারের আদলে বেশ কিছু মহাকাশ যান তৈরীর প্রস্তুতি চলছে মানুষের নতুন পৃথিবীতে রওয়ানা দেবার জন্য। মার্ফির হসপিটালের ঘরে প্রবেশ করে ১ ডজন লোক দেখে কুপার একটু ঘাবরে গেলো, কুপারকে দেখে সবাই একে একে ঘর থেকে চলে গেলো, ১০০ এর কাছাকাছি বয়সের মার্ফির হাতটা ধরে কুপার বললো আমি ছিলাম সে অশরিরি তুমি কি তা জানতে, মার্ফি বললো আমি জানতাম, মানুষ আমাকে পাগল বলতো, বলতো আমি নিজে নিজে সব কিছু বানাচ্ছি কিন্তু আমি জানতাম, কুপার বললো কিভাবে, মার্ফি বললো আমার বাবা আমাকে কথা দিয়েছিলো সে ফিরে আসবে, আমি জানতাম সে তার কথা রাখবে। কুপার বললো এই তো আমি আছি এখন তোমার পাশে। মার্ফি বললো কোন পিতার সন্তানের মৃত্যু দেখা সহনিয় নয়, আমার বাচ্চারা আছে এখন আমাকে দেখবার, তুমি যাও… কুপার বললো কোথায়?, মার্ফি বললো এমিলিয়ার কাছে, সে হয়তো অপেক্ষায় আছে নতুন পৃথিবীতে নতুন জীবন শুরু করবার জন্য। সেদিনই কুপার ও টার্স একটি মহাকাশ যান নিয়ে বেরিয়ে পরলো শনি গ্রহের সেই ওয়ার্ম হোলের পথে, এবার যাত্রা এডমান্ডের গ্রহের প্রতি।
**এডমান্ডের গ্রহ:স্পেসস্যূটের উপরের মাক্স খুলে এমিলিয়া খোলা বাতাসে শ্বাস নেবার পর এডমান্ডের সমাধিস্থল থেকে এগিয়ে যাচ্ছে আলোকজ্জ্বল নতুন কলোনির দিকে চারপাশে পাথুরে পরিবেশ, মাঝে মাঝে সমতল ভূমি চাষাবাদের পূর্বশর্ত সব কিছু নিয়ে একাকী অজানা এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমিলিয়া। ব্লাকহোলের আকর্ষণ ও ত্বরণের কারণে হয়তো এমিলিয়া এডমান্ড কে জীবিত পায় নি, তার গাথা ছেড়া পতাকার পাশে নতুন কলোনিতে নতুন পতাকা উড়িয়েছে এমিলিয়া। কুপারও কি এসে এমিলিয়াকে একই সময়ে পাবে, না কি এমিলিয়ার পরিণতিও এডমান্ডের মতোই হবে, কে জানে? তবুও মানুষ বেঁচে থাকবে, বেঁচে থাকে শত প্রতিকূলতার মাঝে দিয়েও, কোন কোন সময় অলৌকিক কিছু ঘটে কোন সময় নয়। তবুও মানুষের পতাকা বাতাসে উড়বে, উড়ে চলবে আরো নতুন কোন উৎকর্ষতার দিকে।
DO NOT GO GENTLE INTO THAT GOOD NIGHT,
OLD AGE SHOULD BURN AND RAVE AT CLOSE OF DAY,
RAGE, RAGE AGAINST THE DYING OF THE NIGHT.