The Hateful Eight : Movie Review in Bengali

হেইটফুল এইট (হেটারদের ব্যাকগ্রাউন্ড সর্ম্পকে)


গল্প লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক কোয়ান্টিন ট্যারেন্টিনোর ৮ নং ছবি হেইটফুল এইট। গল্পের উল্লেখযোগ্য চরিত্রের সংখ্যা নাকি পরিচালিত ছবির সংখ্যা নিয়ে ছবির নামকরণ হয়েছে তা নিয়ে আমার মাঝে কিছুটা বুঝার অবকাশ বাকী রয়ে গেছে।

সে যাই হোক গল্পতে ফিরে যাই, আমিরিকার গৃহযুদ্ধ কিছুকাল(বছর)আগে সমাপ্ত হয়েছে তবে রয়ে গেছে উত্তর ও দক্ষিনের চাওয়া পাওয়ার অসমাপ্ত হিসাব নিকাশ। মন্টানা আর ডেকোটার মাঝে ওয়াইওমিং প্রদেশে (তখনো ষ্টেট ষ্টাটাস পায়নি ওয়াইওমিং)ভর বিকালে ভয়ঙ্কর বিশাল তুষার ঝড়কে একচুল পিছে রেখে ছয়ঘোড়ার ষ্টেজ কোচ ঘটনা বহুল স্বল্প যাত্রা শেষে চার যাত্রীকে নিয়ে পৌছালো Minnie's Haberdashery লজে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত আরো তিন জন গেষ্ট ও লজের মালিক মিনির অবর্তমানে লজের রক্ষনাবেক্ষনে নিযুক্ত ম্যাক্সিকান সেনর বব।

মিনির লজে নতুন পর্দাপনকারী ও প্রাক্তন উপস্থিত গেষ্টদের পরিচয় চলুন নীচ থেকে জেনে নেই :

প্রথম পক্ষ :

১. জন রুথ (কার্ট রাসেল) : খুতখুতে, অবিশ্বাসী আত্মকেন্দ্রিক ব্যাক্তি জন রুথ একজন বাউন্টি হান্টার (পুরস্কার ঘোষিত অপরাধীদের ধরে আইনের কাছে সর্মোপনকারী)। ওয়াইওমিং এ ঝড়ো বিকালে ভাড়া করা ষ্টেজ কোচ নিয়ে শহর রেড নেকের দিকে রওয়ানা দেওয়া জন রুথের হাতে ধরা পড়েছে ডেইজী ডোমারগো সে এলাকার নামকরা আউটলো (মুলত ডাকাত দল) দল ডোমিংগ্রে গ্যাং এর একজন এবং তার মাথার দাম ১০০০০ ডলার। জন রুথ নিজেকে নাম দিয়েছেন হ্যাঙ্গম্যান তিনি কোন অপরাধীকে নিজ হাতে হত্যা করেন না, বরঞ্চ আইন যখন তাদের ফাঁসি দেয় তাকে তিনি বলেন সত্য বিচার। ডেইজী তার হাতে পড়াটাকে ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি খুব বড় জয় বলে মনে করছেন সে জন্য সব সময়ই সতকর্তার সাথে পরিস্থিতিকে বিচার করছেন যদি একটু ভুলে পুরস্কার হাত ছাড়া না হয়ে যায়।

২. মেজর মারকুয়েস ওয়ারেন (স্যামুয়েল এল জ্যাকসন) : গৃহযু্দ্ধে ইউনিয়ন স্বপক্ষে লড়াই করা সামরিক ব্যক্তি একজন আফ্রিকান আমিরিকান মেজর (আমার মনে হয় স্বঘোষিত কারণ ইউনিয়ন বা ইউনাইটেড ষ্টেট তখন কোন কালার যোদ্ধাকে সার্জেন্ট বা খুব বেশী হলে ল্যাফ্টানেন্ট পদের অধিক র‌্যাঙ্কি দেওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক) যুদ্ধ শেষে তিনি পুরস্কার ঘোষিত আসামীদের খুজে বের করেন হত্যা করেন আর তার লাশটি নিকটবর্তী শহরে পুলিশ থানায় জমা দিয়ে পুরস্কার সংগ্রহ করেন। কাহিনীতে তিনি তিনজন অপরাধীর লাশ নিয়ে নিকটবর্তী শহর রেড নেকের দিকে যাচ্ছিলেন কিন্তু তুষার ঝড়ে তার ঘোড়াটি মারা যায় এবং তিনি অনেক অনুরোধের পর জন রুথের ষ্টেজ কোচে শহর পযর্ন্ত যাবার জন্য স্থান পান। সত্যি বলতে মেজর ওয়ারেনের র্বিতকিত অতীত ও ওয়ালেনব্যাক জেলখানায় তার লাগানো আগুনে মৃত্যুপ্রাপ্ত ৪৭ জন কনফ্যাডারেট সৈনিকের কারণে সে সময় তার মাথার দাম 3০০০০ ডলার ধরা হয়েছিলো এ ব্যাপারে উত্তরের ইউনিয়ন তাকে ক্ষমা করেনি কারন সেই ৪৭ জনের সাথে ইউনিয়ন সৈনিক আরো ৪০ জনের মতো ছিলো কতর্ব্যরত সে জেলখানায়, সামরিক আদালতে সে ধরা দেয়নি তবে অসম্মানজনক পদচ্যুত করা হয়েছে ঠিকই। যুদ্ধ শেষে অনেকেই চেষ্টা করেছে বরফ ঢাকা উয়াইওমিং এ তাকে ধরবার জন্য কিন্তু মেজর একে একে সবাইকে তুষারের মাঝেই চিরবিদায় দিয়েছেন। তার কাছে আছে একটি বিতর্কিত চিঠি লেখক বা বার্তা প্রেরক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন সে চিঠির সুবাদে তিনি অনেক অপ্রিতিকর পরিবেশ নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসেন। সর্বোপরী মারকুয়েস ওয়ারেন একজন খুনী, চতুর ও ধ্বংসাত্মক ব্যাক্তি যে কিনা সব যায়গা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বরফের এই রাজ্যে শেষ ঠিকানা খুজছেন।

3. ডেইজি ডোমারগো ( জেনিফার জেসন লেই) : অত্র এলাকার ত্রাশ ডোমিংগ্রে গ্যাং এর মূল নেতা জোডি ডোমিংগ্রের বোন ডেইজি। নিষ্ঠুরতা, হিংস্রতা আর হত্যা তার চরিত্র বৈশিষ্ঠ্য তা না হলে তার বাউন্টি কেন ১০০০০ ডলার হবে (তখন একজন পদস্থ সৈনিকের মাসিক বেতন ছিলো মাত্র ২০ থেকে ৪০ ডলার) অসংখ্য লুট আর হত্যার অভিযোগ তার নামে। নিজের লাভ আর বেঁচে থাকবার জন্য যা যা করবার প্রয়োজন সব গুনই তার মাঝে আছে।

৪. ক্রিস ম্যানিক্স (ওয়াল্টার গোগিনস) : এরস্কিন ম্যানিক্স এর ছেলে ক্রিস ম্যানিক্স, গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর তার বাবা ও সে ৪০০ জন বিভিন্ন পদের সৈনিক (দলের নাম ছিলো ম্যানিক্স ম্যারোডার্স) নিয়ে ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরেও লড়াই করে যাচ্ছিলো যতোদিন না তাদের লোকবল, মনোবল ও রসদ শেষ হয়ে যায়। সেখান থেকে পলাতক ক্রিস বতর্মানে শহর রেডনেকের শেরিফ মনোনিত হয়েছে কিন্তু দায়িত্ব বুঝে নেবার সময় তুষার ঝড়ে তার ঘোড়াও মারা যায় এবং নানা অনুরোধে ও জন রুথের আগের পরিচিত বলে (নামে শুধু) ষ্টেজ কোচে জায়গা পায় ক্রিস। ম্যানিক্স একজন সত্যকারের বর্ণবিদ্বেষী মানুষ, সে হিসেব করে কথা বলে না, মাঝে মাঝে তার কথায় সে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনে তবে ক্রিস ম্যানিক্স একজন সচেতন মানুষ সে সব খবর রাখে, এমনকি মেজর ওয়ারেনের অতীত কান্ড ও তার মাথার দামের খবরও তার কাছে আছে আর সে জানে প্রেসিডেন্ট লিংকন এমন একজন হত্যাকারীর কাছে চিঠি লিখবেন না তার মানে চিঠিটিও যে ভুয়া সেটা সে দুয়ে দুয়ে চার করে ফেলেছে।

দ্বিতীয় পক্ষ :

৫. সেনর বব (ডেমিয়েন বিচির) : বিশালদেহী ম্যাক্সিকান সেনর বব মিনির লজের তত্বাবধানে আছে বলে পরিচয় দিয়েছে ঠিকই কিন্তু লজের কোন ভেতরের বা বাইরের সংস্থাপনের কোন খবরই সে জানে না। মিনি কোথায় বললে সে বলে মায়ের কাছে গেছে ৪ মাস আগে, এ চার মাস সেই চালাচ্ছে এই লজ। এ কথার মাঝে সন্দেহ দানা বাঁধে মেজর ওয়ারেনের মাঝে তবুও সে চুপ থাকে (আসলে তুষার ঝড়ে বেঁচে থাকাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে তাই সব সন্দেহকে কাকতালিয় মনে হয়)। গোপন তথ্য : আসলে সেনর ববের আসল নাম মার্কো দ্যা ম্যাক্সিকান, ডোমিংগ্রে দলের একজন এখানে আরো তিনজন সহযোগীর সাথে আত্মগোপনে আছে ডেইজিকে জন রুথের হাত হাত থেকে উদ্ধার করবার জন্য।

৬. ওসওয়াল্ডো মোব্রে (টিম রথ) : শহর রেডনেক এবং আরো কয়েকটি শহরের হ্যঙ্গম্যান মোব্রে। রুথ আর মেজর ওয়ারেনের মতো শিকারীরা যখন অপরাধীদের ধরে নিয়ে আসে এই মোব্রেই ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলায় তাদের। ব্রিটিশ বংশদ্ভুত ওসওয়াল্ডো একজন চতুর, কথা ও যুক্তিতে পারদর্শী একজন ব্যাক্তি যিনি জন রুথ আসবার সাথে সাথে তাকে তার সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে নেয়। গোপন তথ্য : ওসওয়াল্ডো মোব্রে আসল নাম পিট দ্য ইংলিশ হিকক্স, মার্কোর তিন সহযোগীর একজন যারা সেদিন সকালে মিনির লজে এসে মিনি, তার স্বামী, কাজের মানুষ ও তিনজন নিরিহ ষ্টেজ কোচ চালককে খুন করে পাশের কূয়ায় ফেলে দিয়েছে আর লজটি তাদের দখলে নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন জন রুথ ডেইজি কে নিয়ে মিনিস লজে আশ্রয় নিবে।

৭. জো গেজ (মাইকেল ম্যাডস্যান) : শান্ত স্থীর উত্তেজনাহীন মানুষ জো গেজ, তার মায়ের সাথে দেখা করতে রেড নেকের ৯ মাইল দুরে তাদের বাসার দিকে রওনা দেওয়া একজন মানুষ। সদ্য ব্যাবসায় লাভ দেখা জো মায়ের সাথে ক্রিসমাস কাটাতে তাদের বাসার দিয়ে রওনা দিয়েছে। পথে বাঁধা হয়ে দারিয়েছে তুষার ঝড় যা কবে থামবে তার ঠিক নেই। গোপন তথ্য : জো গেজ ও ডোমিংগ্রে গ্যাং এর একজন যার আসল নাম গ্রাউচ ডগলাস উদ্দেশ্য ডেইজির মুক্তি।

৮. জেনারেল স্যান্ডি স্মিথার (ব্রুস ডার্ন): যুদ্ধে পরাজিত আহত পঙ্গু জেনারেল স্মিথার আজো কনফেডারেট আর্মি কোট পড়েন। ওয়াইওমিং এ সম্প্রতি মৃত ছেলে চেষ্টার চার্লস স্মিথার এর শেষকৃত্য করার উদ্দেশ্য রওনা দেয়া জেনারেল আটকে আছে এই লজে কখন ঝড় শেষ হবে তার অপেক্ষায়। বর্ণবৈষমের সাগর তার মনে, ব্যাটন রুজের যুদ্ধে হাজারো ক্রীতদাস কালো সৈনিক নিহত হয়েছে তার আদেশে। ধ্বংস আর হত্যার জিঘাংসা আজো তার মনে কালোদের জন্য।

উপরের আটজন ছাড়াও ষ্টেজকোচ চালক ও,বি, জোডি ডোমিংগ্রে, মিনি, মিনির স্বামী আরো কিছু চরিত্র আছে ছবিটিতে যার উপর আলোকপাত আর নাইবা করলাম। সব অভিযাত্রী এক হবার পর কি হলো সে গল্পতেও গেলাম না তবে বলতে পারি, লজের ছোটো ঘরটার মাঝে আপনি মোটামোটি ১৮০০ সালের আমিরিকাকে পাবেন, একজন আরেকজনের প্রতি ন্যায্য অন্যায্য ঘৃনার স্বাদ পাবেন আর পাবেন রুচিশীল-অরুচিশীল সংলাপ যা একসাথে যেমন অর্থবহ তেমনভাবে খুবই মজার। আর টারান্টিনো স্পেশাল ব্লাডি গোর ভায়োলেন্সতো থাকবেই। যারা দেখননি দেখতে পারেন, যারা দেখেছেন তারা আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে উপকৃত হবো। (বানান ভুলের জন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী)

15.09.2018

The Hateful Eight : Movie Review in Bengali

black blue and yellow textile
black blue and yellow textile